মুক্তিযোদ্ধা ও ভিক্ষা ভিক্ষাবৃত্তি


Gournadi.com: “আর ভিক্ষা করতে ইচ্ছা করে না, আল্লায় এইয়ার চাইয়া ক্যান মোরে লইয়া যায় না। রাজাকারগো নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায়। আর মুই যুদ্ধ করছি, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী আছিলাম। মোর সবকিছুর কাগজপাতি আছে, হেইয়ার পরও মোর নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় উডায় নায়”-বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পরেন বাংলার অকুতভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী মোঃ আব্দুল ওহাব পাইক (৮২)।
বরিশালের গৌরনদী উপজেলার টিকাসার গ্রামের মৃত করম আলী পাইকের পুত্র ওহাব পাইক। দেশে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পরই ভারত থেকে প্রশিক্ষন নিয়ে তিনি ৯ নং সেক্টরের গ্র“প কমান্ডার নিজাম উদ্দিন আকনের অধীনে দীর্ঘ ৫ মাস রনাঙ্গনে বীরত্বের ভূমিকা পালন করেন। সাংস্কৃতিক মনা ওহাব আলী যুদ্ধের মধ্যেই চলে যান স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। তিনি আপেল মাহমুদ, আব্দুর জব্বারের সাথে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ছিলেন। তার সহকর্মীরা অধিকাংশরাই আজ দেশের বড় বড়স্থানে প্রতিষ্ঠিত হলেও ভাগ্য বদালয়নি জাতীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের স্বনামধন্য শিল্পী ওহাব পাইকের। বর্তমানে তিনি দুরারোগ্যব্যধিতে আক্রান্ত হলেও অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। গত ১৫/২০ বছর পূর্বে আড়িয়াল খাঁর শাখা পালরদী নদীর ভাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধা ওহাব পাইকের বাড়িঘর বিলিন হয়ে যায়। সে সময় তার স্ত্রী খোদেজা বেগম দুরারোগ্যব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে অর্থাভাবে বিনাচিকিৎসায় মারা যান। পরবর্তীতে দু’পুত্রের ভবিষ্যতের কথা ভেবে মুক্তিযোদ্ধা ওহাব পাইক ঢাকায় গিয়ে ভিক্ষা করা শুরু করেন। কয়েকদিন পর বাড়িতে ফিরে আর ছেলেদের খুঁজে পাননি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বাবার খোঁজে ছেলেরা ঢাকায় গিয়ে নিখোঁজ হয়েছে। পূর্ণরায় ঢাকায় গিয়ে ছেলেদের খোঁজতে ভিক্ষার পেশাকেই বেঁছে নেন মুক্তিযোদ্ধা ওহাব পাইক। একপর্যায়ে তিনি জোলেখা বেগম নামের এক প্রতিবন্ধীকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে বিয়ে করেন। ওই সংসারে তার ৫ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। বর্তমানে সিদ্ধিরগঞ্জ পৌর এলাকার মিজিমিজি মহল্লার একটি ভাড়া বাসায় থেকে ভিক্ষা করছেন মুক্তিযোদ্ধা ওহাব পাইক। বয়স বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে তার একটি চোখ ও একটি হাত বিকলাঙ্গ হয়ে গেছে। অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। সারাদিন ভিক্ষা করে যা পান তা দিয়েই কোন একমতে যেমন নুন আনতে পান্তা ফুরায় তেমনি চলছে মুক্তিযোদ্ধা ওহাব পাইকের অভাবের সংসার।
নতুন করে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম অর্ন্তভূক্তি হওয়ার কথাশুনে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ও একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার কাছে থাকা সকল কাগজপত্র নিয়ে পরিবারের ব্যবহৃত দুটি সিলভারের বালতি ও অন্যান্য সামগ্রী বিক্রি করে ভাড়ায় টাকা যোগাড় করে গত ৯ মে ছুটে এসেছেন নিজ এলাকা গৌরনদীতে। ওইদিন বিকেলে তিনি ছুটে যান গৌরনদী থানায়। এসময় থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ নুরুল ইসলাম-পিপিএম তার দুঃখ দুদর্শার কথাশুনে কিছু আর্থিক সহযোগীতা করেন। পরবর্তীতে তিনি (ওসি) রনাঙ্গন কাঁপানো বীর মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ওহাব পাইককে পাঠিয়ে দেন এ প্রতিনিধির কাছে। গৌরনদী প্রেসক্লাবে বসে কথা বলার সময় কান্নায় ভেঙ্গে পরেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ওহাব পাইক। মৃত্যুর পুর্বে তার নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অর্ন্তভূক্তি হবে কিনা এ নিয়ে তিনি এখনও রয়েছেন শংকিত। যুদ্ধচলাকালীন সময় এতদাঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সৈয়দ মনিরুল ইসলাম বুলেট ছিন্টু জানান, মোঃ আব্দুল ওহাব পাইক একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধ চলাকালীন দীর্ঘ ৫ মাসে রনাঙ্গনে তার ভূমিকা ছিলো অপরিসীম। পরবর্তীতে তিনি (ওহাব) স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী হিসেবে যোগদান করেন। দীর্ঘদিনেও তার নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অর্ন্তভূক্তি না হওয়ায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

No comments:

Post a Comment

thanks for your valuable and important message. keep in touch will reply as soon as possible.
regards
mukthi